ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২ জন নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের নাটঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক (৩৮) ও কুড়িঘর গ্রামের মোটরসাইকেল চালক বাদল সরকার (২৭)। নিহত বাদল কুড়িঘর গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে। এ ঘটনায় সোহাগ (৩৩) নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। ২জন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে হামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। তাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবুল কাশেমের স্থলে তার ছেলে এরশাদুল হক এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গতকাল শুক্রবার রাতে ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামের বাজার এলাকায় ওয়াজ মাহফিল চলছিল। সেই মাহফিলে এরশাদুল ও বাদলসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল যোগে যান। ওয়াজ মাহফিলে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সকলের নিকট দোয়া চান এরশাদ। সেখান থেকে ফেরার পথে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন বাদল এবং তার পেছনে বসা ছিলেন এরশাদ।
তবে গত দু-তিন বছর পূর্বে গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় এরশাদের চাচাতো ভাই মারা যান। ওই ঘটনায় এরশাদের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘর লুটপাট করে ও মামলা দেয়। এরশাদুল হক বাদী হয়ে ২০১৯ সালে ২রা এপ্রিল নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কুড়িঘর গ্রামের আব্দুল মালেককে প্রধান আসামী করে ২০ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ওই মামলার আসামিরা কিছুদিন আগে এলাকায় এলে তাদের আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। পূর্বের এই বিরোধের জেরে গত রাতের ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার।
পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা এরশাদের মোটরসাইকেল এর গতিরোধ করে গুলি ছুড়লে সামনে চালকের আসনে বসা বাদল সরকার প্রথমে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এসময় এরশাদকে লক্ষ্য করে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত এরশাদকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসক তাকে ঢাকায় পাঠান। তবে ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই পথিমধ্যে এরশাদও মারা যান।
ছেলের এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, শুক্রবার রাতে স্থানীয় কুড়িঘর বাজারের পাশে ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিল এরশাদ ও বাদলসহ কয়েকজন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা এরশাদ ও বাদলকে ল্য করে গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই বাদল মারা যান। গুরুতর আহত এরশাদকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাদলের পর এরশাদও ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা গেছেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসল খুনিদের আটক করতে চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত সোহাগ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের সার্থে গ্রেফতারকৃত সোহাগের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।